Shaheda Begum (GSM)

গোল্ড স্টারগ্রামীণ নারী উদ্যোক্তাদের একটি সফল নেটওয়ার্ক

 

জিএসএমরা কমিউনিটি পর্যায়ে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য বার্তা প্রদানের মাধ্যমে জনস্বাস্থ্য পণ্যের চাহিদা ও সরবরাহ বৃদ্ধিতে কাজ করেন ছবি: সংগৃহীত

চারটি এনজিওর মাধ্যমে বাংলাদেশের ৩২টি জেলার ১০৪টি উপজেলায় কমিউনিটি মোবিলাইজেশন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে এসএমসি। এই কর্মসূচির একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ হলো, আগ্রহী গ্রামীণ নারীদের উদ্যোক্তায় রূপান্তরিত করা। গোল্ড স্টার মেম্বার (জিএসএম) হিসেবে খ্যাত এই নারী উদ্যোক্তারা নির্দিষ্ট একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নির্বাচিত হন। জিএসএমরা কমিউনিটি পর্যায়ে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য বার্তা প্রদানের মাধ্যমে জনস্বাস্থ্য পণ্যের চাহিদা সরবরাহ বৃদ্ধিতে কাজ করেন এবং পারিবারিক পর্যায়ে এসএমসির জনস্বাস্থ্য পণ্যসমূহ বিক্রি করে নিজেরা লাভবান হচ্ছেন। গোল্ড স্টার সদস্যরা গর্ভধারণের সঠিক সময় বিরতি, শিশু জন্মের পর প্রথম এক হাজার দিনের যত্ন, বয়ঃসন্ধিকালীন স্বাস্থ্য, পুষ্টি, স্বাস্থ্যবিষয়ক এবং ব্যক্তিগত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রচার করে থাকেন।

এসব নারীকে উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ এবং পরামর্শ প্রদান করে থাকে এসএমসি। প্রশিক্ষণে বিভিন্ন জনস্বাস্থ্যবিষয়ক তথ্য, পণ্যের বিশদ বিবরণ এবং প্রচার, বিক্রয় এবং ব্যবসায়িক কৌশল, জিএসএমের ভূমিকা দায়িত্ব, যোগাযোগের কৌশল ইত্যাদি বিষয়ে তাঁদের দক্ষতা বৃদ্ধি করা হয়। কমিউনিটি পর্যায়ে উদ্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর মধ্যে জনস্বাস্থ্য পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন আচরণ পরিবর্তনমূলক সামগ্রী জিএসএমদের প্রদান করা হয়। কাজটি সহজ সুন্দরভাবে সম্পাদন করার জন্য তাঁদের পণ্যের বিবরণসংবলিত একটি নির্দেশিকাও প্রদান করা হয়। 


গোল্ড স্টার সদস্যরা গর্ভধারণের সঠিক সময় ও বিরতি, শিশু জন্মের পর প্রথম এক হাজার দিনের যত্ন, বয়ঃসন্ধিকালীন স্বাস্থ্য, পুষ্টি, স্বাস্থ্যবিষয়ক এবং ব্যক্তিগত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রচার করেন ছবি: সংগৃহীত

দক্ষতা, অভিজ্ঞতা এবং গ্রহণযোগ্যতা সাপেক্ষে, নির্ধারিত এলাকায় একজন জিএসএম প্রায় এক হাজার থেকে এক হাজার দুই বা তারও বেশি পরিবারের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টিসহ জনস্বাস্থ্য পণ্য সরবরাহ করে থাকেন। এই নেটওয়ার্কে যুক্ত হয়ে এসএমসির পণ্য বিক্রি করে অর্থ উপার্জন তাঁদের ব্যবসায়িক সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়। 

জিএসএমরা সাধারণত জনস্বাস্থ্যবিষয়ক তথ্য প্রচার এবং পারিবারিক পর্যায়ে এসএমসির পণ্য বিক্রি করে থাকেন। তাঁরা প্রকল্প কর্মীদের তাঁদের নির্ধারিত এলাকায় উঠান বৈঠক এবং কিশোর-কিশোরীদের স্বাস্থ্য সেশন আয়োজনে সহায়তা প্রদানসহ অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে জনস্বাস্থ্য পণ্য সরবরাহ করে থাকেন। ছাড়া জিএসএমরা দীর্ঘমেয়াদি স্থায়ী জন্মবিরতিকরণ পদ্ধতি এবং সম্ভাব্য যক্ষ্মা রোগীকে নিকটস্থ সেবাদানকেন্দ্রে রেফার করে থাকেন।   

২০১৩ সাল থেকে শুরু করে বর্তমানে সারা দেশে প্রায় হাজার ২০০ জন নারী উদ্যোক্তা হিসেবে গোল্ড স্টার নেটওয়ার্কের অধীনে কাজ করছেন। ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে একজন জিএসএমের মাসিক গড় বিক্রি হচ্ছে প্রায় ১০ হাজার টাকা। জিএসএমরা পারিবারিক পর্যায়ে জনস্বাস্থ্য পণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করার মাধ্যমে গ্রামীণ এলাকায় জনস্বাস্থ্য পণ্যের চাহিদা, সহজলভ্যতা এবং ব্যবহার বৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে চলেছেন। গত পাঁচ বছরে একজন জিএসএমের বার্ষিক গড় বিক্রি নিম্নলিখিত ছকের মাধ্যমে দেখানো হলো


এসএমসির নারী উদ্যোক্তা বিকাশের এই উদ্যোগ গ্রামীণ নারীদের জীবনে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এনেছে। বিশেষ করে পরিবার এবং কমিউনিটি পর্যায়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করার সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং তাঁদের মতামত প্রকাশের সুযোগ করে দিয়েছে। 

রেজইন্ট বাংলাদেশ লিমিটেড কর্তৃক সম্পাদিতগোল্ড স্টার নেটওয়ার্কের দক্ষতা, দুর্বলতা, সুযোগ এবং চ্যালেঞ্জ মূল্যায়ন, ২০১৯নামক একটি সাম্প্রতিক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ৪৩ শতাংশ জিএসএম মনে করেন, তাঁরা গোল্ড স্টার নেটওয়ার্কের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার কারণে পারিবারিক কমিউনিটি পর্যায়ে তাঁদের সম্মান গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পেয়েছে, যা ভবিষ্যতে তাঁদের মতামত এবং সিদ্ধান্ত প্রদানের ক্ষেত্রকে আরও প্রসারিত করবে। জিএসএমরা উল্লেখ করেন যে তাঁদের এই জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম কমিউনিটি পর্যায়ে খুব ভালোভাবে গ্রহণযোগ্যতা এবং স্বীকৃতি পেয়েছে। কারণ, গ্রামীণ নারীরা পারিবারিক পর্যায়ে তাঁদের কাছ থেকে স্বাস্থ্যসংক্রান্ত পণ্যসামগ্রী কিনতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে থাকেন। এটি খুবই উৎসাহব্যঞ্জক যে সম্প্রতি মোট ৫৭ জন জিএসএম স্থানীয় সরকার নির্বাচনে সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন।

ছাড়া নগর এলাকায় উদ্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর চাহিদা মেটানোর লক্ষ্যে, এসএমসি জানুয়ারি ২০২১ থেকে একই মডেল বাস্তবায়নের কাজ শুরু করেছে। বর্তমানে ১৮৪ জন জিএসএম ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট বরিশাল সিটি করপোরেশন এলাকায় কাজ করছেন। 

গোল্ড স্টার মেম্বার শাহেদা বেগমের গল্প

 

শাহেদা বেগম ছবি: সংগৃহীত

ফরিদপুর জেলার নগরকান্দা উপজেলার একজন সফল প্রতিশ্রুতিশীল জিএসএম শাহেদা বেগম। যিনি ২০১৭ সালে গোল্ড স্টার নেটওয়ার্কে যোগদান করেন। সামাজিক বিপণনের একটি নতুন দিগন্তে প্রবেশ করে তিনি শিখেছেন কীভাবে কমিউনিটি পর্যায়ে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য বার্তা প্রচার এবং জনস্বাস্থ্য পণ্যের চাহিদা সৃষ্টি করে স্বাস্থ্যপণ্য বিক্রি করতে হয়। প্রথম মাসেই তিনি এই ব্যবসায় লাভজনক ফলাফল দেখতে পেয়েছিলেন। বর্তমানে ১৬ থেকে ১৭ হাজার টাকা নিট মুনাফাসহ তাঁর মাসিক বিক্রি প্রায় ৬২ হাজার টাকা। 

পরিবার সমাজে নিজের অবস্থান সম্পর্কে জানতে চাইলে শাহেদা বেগম বলেন, ‘আমি আমার কাজ সত্যিই খুব উপভোগ করি এবং ব্যবসায়িক কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার জন্য আমার স্বামী এবং শ্বশুর-শাশুড়ির কাছ থেকে সব সময় আন্তরিক সমর্থন পেয়েছি। আমি এবং আমার স্বামী যৌথভাবে সন্তানের স্বাস্থ্য পরিচর্যা এবং শিক্ষাসম্পর্কিত বিভিন্ন পারিবারিক বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকি, যা আমি আগে করতে পারিনি। আমি এসএমসির জনস্বাস্থ্যবিষয়ক পণ্যসমূহ বিক্রির মাধ্যমে সমাজের মানুষদের সেবা প্রদানের পাশাপাশি আমার ব্যবসাকে প্রসারিত করে আরও সফলতা অর্জন করতে চাই। এবং এভাবেই গোল্ড স্টার নেটওয়ার্কে সমাজের অন্য নারীদের সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে আমার প্রয়াস অব্যাহত রাখতে চাই।